ইফতার ও সেহরিতে কী খাবেন, আর কী এড়িয়ে যাবেন

Date:

সবাইকে আসন্ন রমজান মাসের শুভেচ্ছা। রমজানে আপনারা কীভাবে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাবেন। অন্য দিনে আমরা পাঁচ বার যতটুকু খাবার খাই, রমজানের সময় সে পরিমাণ খাবার খেতে হবে। এর বেশি নয় আবার কমও নয়। তাহলেই পুরা রমজানে সুস্থ থাকা যাবে। রোজার সময় তিন বেলার খাবার হলো-ইফতার, সন্ধ্যারাতে ও সেহরি।
* ইফতার
রোজার প্রধান আকর্ষণই হলো ইফতার। সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষ ইফতারের আয়োজন করে। এ সময় অনেক বেশি খাবারের পদ থাকা উচিত নয়। তাহলে দেখা যাবে একটি ইফতারের প্লেটে সারা দিনের বরাদ্দকৃত ক্যালরি সবটাই চলে এসেছে। ইফতারের প্রধান অনুষঙ্গ শরবত। এ শরবত সারা দিনের পানির অভাব পূরণ করে ও ক্লান্তি দূর করে। বিভিন্ন উপাদান দিয়ে শরবত করা যায়। যেমন-ইসবগুলের ভূসি, তোকমা, সিয়াসিড, লেবু, তেঁতুল, বেল, দুধ, দই, ফলের রস ইত্যাদি। শরবতের পরিবর্তে ডাবের পানি খাওয়া যাবে। তবে কখনই কোমল পানীয় নয়। বৈচিত্র্য আনার জন্য একেক দিন একেক রকম শরবত তৈরি করা যায়।
ইফতারের খাবারগুলোর মধ্যে আছে-ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, কাবাব, চিকেন ফ্রাই, ডালপুরি, আলুপুরি, ডিমচপ, শাকের বড়া, দই বড়া, হালিম, পাকুড়া, চিড়া-দই, পাকা কলা, ঘুঘনি, খেজুর, তেহারি, ফ্রায়েড রাইস, নরম খিঁচুড়ি, মাছের চাপ ইত্যাদি। ইফতারের প্লেটে ছোলা-মুড়ি ছাড়া একটি বা দুটি তেলে ভাজা রাখলে ভালো হয়। বেশি বেশি তেলে ভাজা খাবার খেলে বদহজম, গ্যাস্ট্রাইটিস, ওজনাধিক্য, রক্তে চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধি ইত্যাদি হতে পারে। এদিকে পেটে চর্বির স্তর বেশি থাকলে ক্ষুধা বেশি অনুভূত হয়। অর্থাৎ ইফতার ও সেহরিতে বেশি খাবার খেলে ক্ষুধার তীব্রতা বেড়ে যায়। তখন সারা দিন উপবাস করাটা কঠিন হয়ে পড়ে। ইফতারে কাঁচা ছোলা, আদা, পুদিনা পাতা ও লবণ দিয়ে মেখে খেলে কোলেস্টোরেল কমার সম্ভাবনা থাকে। এটা বেশ উপাদেয় এবং স্বাস্থ্যসম্মত। ইফতারের পরিমাণ হবে অন্য দিনের সকালের সমপরিমাণ। ইফতার হবে রুচিকর ও স্বাস্থ্যকর।
* সন্ধ্যারাতের খাবার
এ সময় হালকা খাবারই ভালো। তরকারিতে থাকবে হালকা মসলা। ডাল বাদ দিলে ক্ষতি নেই। এ সময়ের খাবারের পরিমাণ হবে অন্য দিনের রাতের খাবারের সমপরিমাণ।
* সেহরি
ইফতারের মতো খুবই গুরুত্বপূর্ণ হলো সেহরির খাবার। তবে খুব বেশি পরিমাণে না খাওয়াই ভালো। আবার গুরুপাক খাবার খেলেও সারা দিনে সমস্যা হতে পারে। অনেকে আবার আলসেমির জন্য সেহরি একেবারে বাদ দেন অথবা খুব কম খেয়ে থাকেন। সবই খারাপ। এ সময় খেতে হবে-ভাত বা রুটি, মাছ/মাংস/ডিম, ডাল,সবজি, দুধ বা দই। ভাত-রুটি ছাড়াও খাওয়া যাবে পরাটা, পাউরুটি, টোস্ট, দুধ-সেমাই, দুধ+ভাত+কলা ইত্যাদি। সেহরির খাবার হবে অন্য দিনের দুপুরের খাবারের সমপরিমাণ। রমজানে কখনও বাসী খাবার খাওয়া উচিত নয়। পানিশূন্যতা রোধ করার জন্য পানির পরিমাণ সঠিক মাত্রায় রাখতে হবে।
* ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিস থাকলে অনেকে রোজা রাখতে ভয় পান। ভাবেন হাইপোগ্লাইসেমিয়া হবে। আসলে অসুস্থতা নিয়েও রোজা রাখা সম্ভব। যদি নিয়ম-কানুন মেনে চলা হয় তাহলে সমস্যা হয় না। শরবত খেতে হলে-ডাবের পানি, লেবু, পানি মেশানো ফলের রস, তোকমা, ইসবগুলের ভূসি, সিয়াসিড। চিনি ছাড়া অথবা বিকল্প চিনি দিয়ে শরবত করে খাওয়া যাবে। লাচ্ছি-ঘোল খেলেও অসুবিধা নেই। ইফতারে মিষ্টি ছাড়া খাবারগুলো খেতে কোনো বাধা নেই। তবে মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া চলবে না। বাদ দিতে হবে-চিনি, গুড়, গ্লুকোজ, মধু, পায়েস, দুধ-সেমাই, পুডিং, মিষ্টি দই, জিলাপি, তেলে ভাজা খাবার যত কম খাওয়া যায় তত ভালো। টক-মিষ্টি উভয় ধরনের ফল দিয়ে সালাদ ও রায়তা করে খাওয়া যাবে। ইফতার ও সেহরি এমন হবে যাতে রক্তে শর্করা বেড়ে না যায়। ডায়াবেটিস থাকলে কোনোবেলায় না খেয়ে থাকা যাবে না। এতে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে। যদি ইফতারে দুধ বা দই খাওয়া হয়, তাহলে সেহরিতে দুধ বা দই না খাওয়াই ভালো।
* কিডনি ও ইউরিক অ্যাসিড
এ ধরনের সমস্যায় ডাল বাদ দিয়ে আটা-ময়দা-চালের গুঁড়া, আলু দিয়ে ইফতার তৈরি করতে হবে। যেমন-আলুর চপ, আলুপুরি, ফ্রায়েড রাইস, চিড়া, মুড়ি, পাস্তা, নুডুলস ইত্যাদি।
* হৃদরোগ
এক্ষেত্রে উচ্চতাপে ডুবা তেলে ভাজা খাবার না দেওয়াই ভালো। এতে ট্রান্সফ্যাট তৈরি হয়ে হৃদরোগের সমস্যা আরও বেড়ে যাবে। মাছ, ফল ও শাকসবজি হৃদরোগীদের জন্য উত্তম। ননীবিহীন দুধ ও টক দই খাওয়া যাবে।
* বয়স্কদের রোজা
তাদের খাবার হবে সহজপাচ্য এবং নরম। দাঁতের সমস্যার জন্য তারা অনেক সময় খাবার চিবিয়ে খেতে পারেন না। এ জন্য বুট ভাজা না দিয়ে ঘুঘনি, চটপটি, হালিম, নরম খিঁচুড়ি, চিড়া-দই-কলা, স্যুপ, দুধ-সুজি, দুধ-পাউরুটি, পায়েস দিলে ভালো হয়। কেউ পছন্দ করলে দুধ-ওটস দেওয়া যায়। দুধ খেতে না চাইলে দই-ছানা দেওয়া যাবে। খেজুরে কোনো সমস্যা নেই। ডিম-মুরগির মাংস অবশ্যই তাদের খাবারে থাকতে হবে।
* কিশোর-কিশোরীদের রোজা
এদের খাবারে যেন পুষ্টির ঘাটতি না হয়, সেদিকে পরিবারের সবার লক্ষ্য রাখতে হবে। তাদের লেখাপড়া ও খেলাধূলার জন্য শক্তি প্রয়োজন। এজন্য রোজা রাখলেও তাদের খাবারে ডিম-দুধ-মাছ-মাংস-ডাল অবশ্যই যেন থাকে। পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা করতে হবে। সন্ধ্যারাতে ভাত খেতে না চাইলে রুটি-লুচি, দুধ-ওটস, ডিম, দিতে হবে। সেহরিতে ভাত-মাছ-মাংস-ডাল-ডিম-দুধ-পাকাকলা সবই থাকতে হবে। খুব কম খাবার খেলে দুর্বলতার জন্য রোজা রাখতে পারবে না।
লেখক : সভাপতি, ডায়াবেটিস নিউট্রিশনিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী ও অ্যাডভান্স হাসপাতাল, ঢাকা।

Popular

More like this
Related

যশোরের বেনাপোলে সড়ক দুর্ঘটনায় বিজিবি সদস্য নিহত

বেনাপোল প্রতিনিধি: যশোরের বেনাপোলে সড়ক দুর্ঘটনায় বিজিবি সদস্য নিহত...

রাফিনিয়া-ইয়ামাল নৈপুণ্যে কোয়ার্টার ফাইনালে বার্সা

রাফিনিয়া-ইয়ামাল নৈপুণ্যে কোয়ার্টার ফাইনালে বার্সা প্রথম লেগে এগিয়ে থাকা...

সাততলা বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে

সাততলা বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে পৌনে দুই ঘণ্টার চেষ্টায় রাজধানীর...

যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যে গাজায় ইসরাইলি হামলা, নিহত ৮

যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যে গাজায় ইসরাইলি হামলা, নিহত ৮ ফিলিস্তিনের...