ঢাকাই সিনেমায় বাড়ছে বিদেশি নায়িকার কদর

Date:

ঢাকাই সিনেমায় বাড়ছে বিদেশি নায়িকার কদর ঢাকাই সিনেমার বর্তমান অবস্থা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠলেও, দুই ঈদে ইন্ডাস্ট্রি বেশ চাঙা হয়ে ওঠে, এ নিয়ে সংশয় নেই। ঈদকে কেন্দ্র করেই জমে ওঠে ঢাকাই সিনেমার বাজার। তারকানির্ভর ও বড় বাজেটের সিনেমাগুলো ঈদেই মুক্তি দিতে মুখিয়ে থাকেন পরিচালক-প্রযোজকরা।
এসব সিনেমায় দেশি শিল্পীর পাশাপাশি বিদেশি শিল্পীদের উপস্থিতিও লক্ষণীয়। সিনেমার প্রতি দর্শক ও মিডিয়ার আকর্ষণ তৈরি করতেই নির্মাতা প্রযোজকরা বিদেশি নায়িকাদের প্রতি ঝুঁকছেন বলেই মনে করছেন অনেকে। গত কয়েকবছর ধরেই ঈদের সিনেমাগুলোতে বিদেশি নায়িকাদের স্রোত যেন বেড়েছে। বিষয়টি এমন নয় যে, ঈদের সিনেমায় শুধু তারা অভিনয় করছেন।
এর আগেও ঢাকাই সিনেমায় বিদেশি নায়িকাদের দেখা গেছে। তবে ইদানীং সেটা একটু বেশিই দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে, নায়ক শাকিব খান তো এখন বিদেশি নায়িকা ছাড়া যেন সিনেমাই করতে পারছেন না। সবশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত তার একাধিক সিনেমার নায়িকা ভারতের।
ঢাকাই সিনেমায় বহু আগেই থেকেই কাজ করছেন টালিউড তথা কলকাতার নায়িকারা। তবে বর্তমানে এ ইন্ডাস্ট্রির দিকে বেশি নজর তাদের। এর কারণ, কলকাতার ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ কম। তাই ঢাকামুখী হচ্ছেন সেখানকার শিল্পীরা। গত দুবছরে বাংলাদেশে কাজ করেছেন কলকাতার ইধিকা পাল, দর্শনা বণিক, মিমি চক্রবর্তী, সায়ন্তিকা ব্যানার্জি, কৌশানী মুখার্জিসহ আরও অনেকে। তারও আগে কাজ করেছেন শ্রাবন্তী, স্বস্তিকা, প্রিয়াঙ্কা, ঋতুপর্ণার মতো শিল্পীরা। এবারের ঈদেও ‘বরবাদ’ নামে একটি সিনেমায় দেখা যাবে কলকাতার ইধিকা পাল ও নুসরাত জাহানকে।
শুধুই টালিউড নয়, বলিউডের নায়িকা সোনাল চৌহানসহ মার্কিন অভিনয়শিল্পীরা অভিনয় করছেন বাংলাদেশি সিনেমায়। এ বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা? বা দেশের নায়িকাদের ভবিষ্যৎ কী? সিনেমাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘বিদেশি নায়িকা দিয়ে অভিনয় করানোর কারণে আরও প্রকট হবে শিল্পী সংকট।’
এদিকে টালিউড, বলিউডের পর এবার ঢাকাই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য বাংলাদেশে আসছেন পাকিস্তানের অভিনেত্রী ও মডেল জারা আহমেদ। ঢাকাই সিনেমায় সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানি অভিনয়শিল্পীদের উপস্থিতি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সবশেষ ১৯৮৬ সালে চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘লেডি স্মাগলার’-এ পাকিস্তানের নায়িকা বাবরা শরীফকে দেখা গিয়েছিল। সম্ভবত সেটিই ছিল শেষ কোনো পাকিস্তানি অভিনেত্রীর ঢাকাই সিনেমার মূল চরিত্রে অভিনয় করা।
তবে এবার যেন সেই দূরত্ব ঘুচতে চলেছে। নির্মাতা আসিফ ইকবাল জুয়েল পরিচালিত ‘ফোর্স’ নামের অ্যাকশনধর্মী একটি সিনেমার প্রধান চরিত্রে কাজ করবেন পাকিস্তানের জারা। দীর্ঘ সাড়ে তিন দশকের মধ্যে সত্যিকার অর্থে তিনিই প্রথম কোনো পাকিস্তানি নায়িকা, যিনি এ দেশের সিনেমায় মূল ভূমিকায় অভিনয় করতে যাচ্ছেন। জারার অভিনয় প্রসঙ্গে নিশ্চিত করেছেন পরিচালক নিজেই।
এদিকে এক ভিডিওবার্তা দিয়ে জারাও অভিনয়ের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ভিডিওবার্তায় অভিনেত্রী বলেন, ‘হ্যালো বাংলাদেশ, পাকিস্তান থেকে আমি জারা আহমেদ। বন্ধুরা, আমি অনেক অনেক উচ্ছ্বসিত, কারণ মারকাটারি অ্যাকশনধর্মী একটা বাংলাদেশি সিনেমার মুখ্য অভিনেত্রী হিসাবে অভিনয় করতে চলেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সব সময়ই আমার অ্যাকশনধর্মী সিনেমায় অভিনয়ের শখ ছিল। চিত্রনাট্য যখন পেয়েছি, খুব ভালো লেগেছে। সবচেয়ে বড় কথা, পাকিস্তান-বাংলাদেশের একসঙ্গে কাজের সুযোগ, এটা দুই দেশের একটা যৌথ প্রচেষ্টা। আশা করছি, বেশ ভালো অভিজ্ঞতা হবে।’
সিনেমাটির গল্প প্রসঙ্গে নির্মাতা বলেন, ‘প্রতিশোধের গল্প নিয়ে নির্মিত হবে ‘ফোর্স’ সিনেমাটি। পরিবার হারিয়ে একজন সাধারণ মানুষ কতটা প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ওঠে, সেটি দেখানো হবে এ গল্পে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ড ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও উঠে আসবে।’ তিনি আরও জানান, এপ্রিলের মাঝামাঝি সিনেমাটির শুটিং শুরু হবে। এফডিসি ছাড়াও কেরানীগঞ্জ, গাজীপুরে শুটিংয়ে অংশ নেবেন পাকিস্তানি এ নায়িকা। প্রায় দুই সপ্তাহ তিনি বাংলাদেশে থাকবেন। এপ্রিলে শুটিং শেষে এ বছরই সিনেমাটি কুরবানির ঈদে মুক্তির পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে ঢাকাই সিনেমায় একের পর এক বিদেশি নায়িকা নেওয়ার বিষয়ে নির্মাতাদের যুক্তি, ‘গল্পের প্রয়োজনেই নেওয়া হচ্ছে তাদের’। তবে ঢালিউডের সিনেমায় বিদেশি নায়িকা নিয়ে কাজ করার বিষয়টি আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকে। এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘অস্বীকার করার উপায় নেই, দেশে শিল্পী সংকট রয়েছে। নতুন নায়িকা তৈরি হচ্ছে না। যে কয়েকজন আছেন তারাই ঘুরে ফিরে কাজ করছেন।
এ ছাড়া দেশের অনেক নায়িকা আছেন যারা নিয়মনীতি মানেন না। তাই নির্মাতা ও প্রযোজকরা বিদেশি শিল্পীদের দিকে ঝুঁকছেন। এটা আমাদের ইন্ডাস্ট্রির জন্য সুখকর নয়। বিদেশি শিল্পীদের নিয়ে কাজের সংখ্যা এভাবে বাড়তে থাকলে আমাদের শিল্পীরা ধীরে ধীরে বেকার হয়ে পড়বেন।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিত্রনায়ক বলেন, ‘এই স্রোত আরও বাড়বে। কেননা নায়িকা সংকট, ইমেজ সংকট, আর বাজেট একটা বিষয়। একজন নায়কের সঙ্গে যে ধরনের নায়িকা মানাবে, সেটা বাংলাদেশে নিতে গেলে বাজেটে কুলাবে না। কিন্তু অনায়াসে কলকাতা থেকে নায়িকা পাওয়া যাবে। এ ছাড়া মিডিয়া কাভারেজের বিষয়টিও হয়তো বিদেশি নায়িকাকে নিলে বেশি পাওয়া যায়।’
পরিচালক সমিতির সভাপতি, অভিনেতা ও চলচ্চিত্র নির্মাতা কাজী হায়াৎ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে, এখানকার শিল্পীরা যদি দুর্লভ হয়, তাহলে শূন্যস্থান পূরণ করতে বিদেশি শিল্পীরা আসবেই। ইন্ডাস্ট্রি চলমান রাখতে তাদের (বিদেশি নায়িকা) আনতেই হবে। এটা স্বাভাবিক, আমাদের মেনে নিতে হবে। এবং সেটাই এখন হচ্ছে। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কী হবে এটা আমার জানা নেই।’

Popular

More like this
Related

সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি 

সাবেক প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা...

যশোরে তরুণীকে গণধর্ষণে জড়িতদের ফাসির দাবিতে আদালত চত্বরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ

যশোরে তরুণীকে গণধর্ষণে জড়িতদের ফাসির দাবিতে আদালত চত্বরে মানববন্ধন...

সাবেক এমপি শাহীন চাকলাদার সহ তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করেছে দুদক 

সাবেক এমপি শাহীন চাকলাদার সহ তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুটি...

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জীবিত যোদ্ধা শামসুদ্দিনকে দেখতে তার বাসায় যশোরের জেলা প্রশাসক 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জীবিত যোদ্ধা শামসুদ্দিনকে দেখতে তার বাসায় যশোরের...