যশোরে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

Date:

ভবদহ পানির নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি জরুরি ভিত্তিতে ৫ দফা দাবি বাস্তবায়নে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এ দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামী ২৪ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাপী এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ সহ আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এক্ষেত্রে কৃষি অফিস অসত্য তথ্য প্রদান করে সরকারকে বিভ্রান্ত করছে বলে জানিয়েছেন। গতকাল রোববার দুপুরে বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ যশোর জেলা কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রনজিত বাওয়ালী এ তথ্য জানিয়েছেন। তার পক্ষে সংগঠনের সদস্য সচিব চৈতন্য কুমার পাল লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন,

আমডাঙ্গা খাল সংস্কারে ইউ-ড্রেন ৩৩ ফুটের স্থলে কমপড়্গে ১০ ফুট বাড়িয়ে ৪৩ ফুট করতে হবে। চলতি বোরো আবাদ সফল করার লক্ষে ভবদহ ¯স্নুইস গেট খুলে দিয়ে পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা দুর করা, এ ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা অপরিকল্পিত তৎপরতা বন্ধ করে ফসল ফলানো নিশ্চিত করা, এখনই সম্ভাব্য বিলে টিআরএম চালু করে এটা সমাধানের প্রধান উপায় হিসেবে আইনি দীর্ঘসূত্রিতার অবসান করা, নদীগর্ভে সকল অবৈধ দখলদার স্থাপনা উচ্ছেদ ও তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করা এবং কৃষি ঋণ আদায় বন্ধ করে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতিপূরণ ও দিনমুজুর গরীব কৃষকদের খাদ্য দেয়া।

৫ দফা এসব দাবি জানিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করে সংবাদ সম্মেলনে খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করা ও জলাবদ্ধতা নিরসন করার লক্ষে সরকারি উদ্যোগ যাতে ব্যর্থ না হয় তার জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা দাবি জানিয়ে গভীর ক্ষোভ, দুঃখ ও হতাশার কথা জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়েছে, ভবদহ জলাবদ্ধ অঞ্চলে অধিকাংশ জমিতে বোরো চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না। কৃষি অফিস অসত্য তথ্য প্রদান করে সরকারকে বিভ্রান্ত করছে। বোরো চাষ হওয়ার যে বা¯ত্মবতা সৃষ্টি হয়েছিল তা নস্যাৎ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডই দায়ী।

বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ভবদহ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের ঘোষণা দেন এবং তাদের দাবিসমূহ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা প্রদান করেন। তাদের দাবির ভিত্তিতে যেসব কাজ চলমান তা হলো-

আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের প্রকল্প গ্রহণ ও টেন্ডার করা হয়েছে। তবে খালের ইউ-ড্রেন অংশ ৩৩ ফুট চওড়া করায় যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা পানি নিষ্কাশনে সমস্যা হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিকল্পনা রয়েছে ভবিষ্যতে আমডাঙ্গা খালের ¯স্নুইসগেট প্রসস্থ করার। সেক্ষেত্রে ইউ-ড্রেন কমপক্ষে আরও ১০ ফুট বাড়ানো দরকার। নচেৎ ভবিষ্যতে বাড়াতে গেলে নতুন সংকট ও অর্থ অপচয় হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে এই জনপদ ডুবে যাবার যে সম্ভাবনা তা মোকাবেলায় পানি নিষ্কাশনের সকল পথ উন্মুক্ত প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে আমডাঙা খালে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে। সামগ্রিক বিবেচনায় ওই খালের ইউ-ড্রেন কমপক্ষে আরো ১০ ফুট প্রশস্থ করতে হবে। দ্রুত পানি নিষ্কাশন করে বোরো চাষ করার লক্ষ্যে ভবদহ ¯স্নুইসগেট থেকে ভাটিতে ভরাট হয়ে যাওয়া হরি নদী খননের জন্য দেয়া প্রতিশ্রম্নতি অনুযায়ী ৮টি খনন যন্ত্র প্রদান করা হয়। নদী খননের সাথে সাথে গেট খুলে দেবার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সে সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে চলেছে। অপরিকল্পিত ও কাজের দীর্ঘসূত্রিতা, গেট খুলে দেবার কাজে তালবাহানা করছে। কুটযুক্তির মাধ্যমে ফসল ফলানোর জন্য উপদেষ্টাদের বাস্তব সম্মত প্রতিশ্রম্নতি ব্যর্থ করে দেওয়া হচ্ছে। একই সাথে পাউবো কর্তৃপক্ষ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্থ করতে জনগণের সাথে প্রতারণামূলক অবস্থান নিয়েছে।

বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে লুটেরা স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থে টিআরএম প্রকল্প বাতিল ও পাম্প চালু করে নদীকে হত্যা করা হয়েছিল। এ দুর্ভোগের জন্য গণবিরোধী সে সিদ্ধান্তই দায়ী। এখনো সেই চক্র সক্রিয় রয়েছেএবং তারা সরকারের কাছে কিছু স্বাক্ষরসহ আবেদন করেছে উল্লেখ করে বলা হয়, স্থানীয় পাউবো কর্তৃপক্ষের মধ্যে সেই ভূত চেপে আছে। সে কারণেই সরকারি সিদ্ধান্ত বানচাল হতে চলেছে।

সংবাদ সম্মেলনে এ অশুভ তৎপরতার তীব্র নিন্দা ও এর বিহিত করার জন্য সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এ মুহূর্তে ভবদহ ¯স্নুইসগেট খুলে দিয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার অব্যহত রাখলে ফসল ফলানো সম্ভব হতে পারে জানান চৈতন্য পাল।

তিনি বলেন, টিআরএম প্রকল্প গ্রহণ করা হবে মর্মে সরকারি প্রতিশ্রম্নতি অনুযায়ী উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও দীর্ঘসূত্রিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। টিআরএম বিরোধীরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তৎপর রয়েছে । ফলে ওই জনপদের মানুষের মধ্যে সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে। এ অভিজ্ঞতা থেকে তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন,চলমান নদী খনন কাজের সাথে এখনই একটি বিলে টিআরএম চালু করা হোক তা না করা গেলে যে খনন কাজ হচ্ছে তাতে আবার ভরাট হয়ে যাবে। অভয়নগর, মণিরামপুর, কেশবপুর, ডুমুরিয়ায় নদী-খাল সংস্কারের কাজ অর্থহীন হয়ে পড়বে। ফলে জরুরি ভিত্তিতে টিআরএম প্রকল্প গ্রহণ ও চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে ।

লিখিত বক্তব্য আরো বলা হয়, পানিসম্পদ উপদেষ্টার উপস্থিতিতে যশোর সার্কিট হাউজে গণশুনানিতে তিনি ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে তদারকি কমিটি গঠন করার জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছিলেন। জেলা প্রশাসক সে নির্দেশ উপেক্ষা করেছেন বলে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়েছে ওই সংবাদ সম্মেলনে।

সংবাদ সম্মেলনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বাবুদা ও পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্ঠা ইকবাল কোভিদ জাহিদ, তসলিম উর রহমান, সদস্য জিল্লুর রহমান ভিটু অনিল কুমার বিশ্বাস প্রমুখ।

Popular

More like this
Related

যশোরে জামাতের আরবপুর ইউনিয়ন অফিস উদ্বোধন ও দোয়া অনুষ্ঠিত

আজ শুক্রবার বাদ আছর যশোরে জামাতের আরবপুর ইউনিয়ন শাখার...

যশোরের চাচড়ায় ইউপি চেয়ারম্যানের জমি দখল,থানায় অভিযোগ

যশোরের চাচড়ায় ইউপি চেয়ারম্যানের জমি দখল,থানায় অভিযোগ যশোরের মাহিদিয়া...

যশোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে শুভোচ্ছা মিছিল অনুষ্ঠিত

যশোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে শুভোচ্ছা মিছিল অনুষ্ঠিত যশোরের...

দলের নির্দেশনা অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে: রবিউল ইসলাম

দলের নির্দেশনা অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে:...