রমজানে মুখের যত্নে করণীয় সঠিকভাবে রোজা পালনের জন্য শারীরিক সুস্থতা জরুরি। তবে দাঁতে ব্যথা, মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া, আক্কেল দাঁতের জটিলতা বা নানা ক্ষতসহ মুখের মধ্যে অনেক সমস্যা, রোজাদারের কষ্টের কারণ হতে পারে। জেনে নেই, রোজার সময়ে মুখের অভ্যন্তরের কিছু পরিবর্তন থেকে মুখের স্বাস্থ্য কী ধরনের ক্ষতিতে পড়তে পারে।
* মুখে দুর্গন্ধ
রমজানে মুখের দুর্গন্ধে অনেকেই বিব্রত থাকেন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ। রোজা অবস্থায় মেসওয়াক বা প্রয়োজনে সাবধানতার সঙ্গে দাঁত ব্রাশও করা যেতে পারে। গন্ধ ও স্বাদবিহীন টুথপেস্ট পাওয়া যায়, একান্তই কিনতে না পারলে মেসওয়াক কার্যকর। প্রতি নামাজের আগে হাদিসে মেসওয়াকের বিষয়টি শক্তভাবে উঠে এসেছে, তবে সেটা যেন নরম ও নিয়মমাফিক হয়। শক্ত মেসওয়াক বা ব্রাশ দাঁতের প্রতিরক্ষা আবরণকে ক্ষয় করতে পারে।
▶ করণীয় : ইফতার ও সেহরির পর অন্তত দুই মিনিট করে নিয়ম অনুযায়ী দাঁত ও মুখ পরিষ্কার করা, সেহরির পর ডেন্টাল ফ্লস করা, প্রয়োজনে অ্যালকোহল মুক্ত মাউথওয়াশ ব্যবহার, ওজুর সময় ভালোভাবে কুলি করা ও মাড়ি ম্যাসাজ করা প্রয়োজন।
* মুখের শুষ্কতা
সারা দিন পানি পান না করা ও খাবার না চাবানোর কারণে মুখে লালা নিঃসরণ কমে যাওয়ায় মুখ শুষ্ক হয়ে পড়ে। ফলে লালার স্বাভাবিক কাজ যেমন দাঁতকে পরিষ্কার রাখা, জীবাণুকে প্রতিহত করা, মুখকে পিচ্ছিল রেখে কথা বলতে সাহায্য করা ও ঘর্ষণজনিত ক্ষুদ্র ক্ষত থেকে রক্ষা করাসহ নানা দিক ব্যাহত হয়। শুষ্ক মুখ রোগ তৈরির অনুকূলে কাজ করে।
▶ করণীয় : ইফতারের পর সেহরি পর্যন্ত পর্যাপ্ত তরল পানীয় পান করতে হবে। বাজারজাত কোমল পানীয় বা কৃত্রিম ফলের জুস পরিহার করে বিশুদ্ধ পানি ও শরীরের অন্য রোগ বিবেচনা করে, লেবু শরবত, মৌসুমি ফলের জুস যেমন কাঁচা আম, মালটা, বেল, আনারস, তরমুজ, ইসবগুলের ভুসি জাতীয় তরল পানীয় পান করতে হবে, তবে তা চিনি মুক্ত রাখা শ্রেয়। মুখের স্বাস্থ্যরক্ষা ও শরীরকে রোগ প্রতিরোধী রাখতে চিনির তৈরি খাবার খাওয়া কমাতে হবে। শরীরে বাড়তি চিনির কোনো প্রয়োজন নেই, বাকি স্বাস্থ্যকর খাবার চিনির চাহিদা মেটাতে পারে। সেহরির শেষ সময়ের ৩০ মিনিট আগে খাবার গ্রহণ করে ২০ মিনিট পর পর্যাপ্ত পানি পান করা ভালো। যাদের মুখ অতিরিক্ত শুষ্ক হয়, তারা সেহরির পর দুইটা এলাচ দানা চিবিয়ে খেয়ে দেখতে পারেন। খুব বেশি শুষ্ক থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
* খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ও অন্য রোগ
মুখের শুষ্কতা বা মুখ পরিষ্কারে অনীহার পাশাপাশি আমাদের খাদ্য তালিকাটিও মুখের জন্য স্বাস্থ্যবান্ধব থাকে না। রুচির জন্য চিনির শরবত, জিলাপি, মিষ্টি ইত্যাদি খাবার বেশি খাই যা দাঁতের ক্ষতি করে। অন্যদিকে ভাজাপোড়া থেকে গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিডিটির ফলে পেটের অ্যাসিড মুখে এসে দাঁতক্ষয় শুরু করতে পারে। যাদের ক্রনিক অসুখ যেমন-ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ আছে তাদের ওষুধের মাত্রা ও সময় পরিবর্তনে অসুখের মাত্রা বেড়ে মুখের স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
▶ করণীয় : খাবারের তালিকা স্বাস্থবান্ধব হতে হবে। সেহরিতে পরিমিত ভাতের সঙ্গে ছোট মাছ, সামুদ্রিক মাছ বা মাংস, ডাল, সবজি, সালাদ, এক কাপ দুধ বা টকদই, মিষ্টি ফল রাখতে পারেন। প্রচলিত মিনিকেট চাল না খেয়ে সিদ্ধ মোটা চাল বা লাল চালের ভাত খেতে পারেন। মজাদার ভাজাপোড়া খাবারমুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে, এমনি কি ছোলা ভাজার পরিবর্তে সেহরির সময় কাঁচা ছোলা ভিজিয়ে ও ইফতারিতে আদা কুচি দিয়ে খাওয়া ভালো। খেজুরের উপকারিতা অনেক, সঙ্গে ১টা আপেল বা কলা খাওয়া যেতে পারে। শসা, খিরা, পেয়ারা এগুলো বেশি খেতে পারবেন। মুড়ি বা চিড়া খাওয়া যায়। সেহরিতে রুটি, খিচুড়ি, বাদাম, ভাজাপোড়া পিপাসা বাড়াতে পারে।
* রমজানে দাঁতের চিকিৎসা
রোজা রেখে দাঁতের চিকিৎসা করা নিয়ে অনেকের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলেও, একাধিক ইসলামিক চিন্তাবিদদের তথ্য মতে, রোজা রেখে ডেন্টালের চিকিৎসা নেওয়া যায়। তবে অতি সতর্ক থাকতে হবে যেন পানি, রক্ত বা ওষুধ গলার ভেতরে না যায়। লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া গ্রহণেও রোজা ভাঙে না। তবে রক্তপাতের চিকিৎসাগুলো ইফতারের পর করা নিরাপদ। তাহলে সিয়ামের নিয়ম-কানুন রক্ষা হয়। সুতরাং এ সময় মুখের কষ্টে ওষুধ খেয়ে সাময়িক সুরাহা করে রোগের তীব্রতা না বাড়িয়ে অথবা সহ্য করে রোগকে পুষে না রেখে চিকিৎসা নিতে হবে।
লেখক : রাজ ডেন্টাল সেন্টার, কলাবাগান, রাজ ডেন্টাল ওয়ার্ল্ড, পান্থপথ ঢাকা।