শবেবরাতের আমল ও করণীয়

Date:

শবেবরাতের আমল ও করণীয় আরবি অষ্টম মাস শাবানের চৌদ্দতম তারিখ দিবাগত রাত পবিত্র শবেবরাত। এ রাতে সূর্যাস্তের পর থেকে শেষ রাত পর্যন্ত মহান আল্লাহ পৃথিবীর প্রথম আকাশে এসে তাঁর বান্দাকে এ রকম মায়া আর দয়া নিয়ে ডাকতে থাকেন।

যারা তার এ ডাকে সাড়া দিয়ে প্রার্থনায় লিপ্ত হয়, তারা কল্যাণকামী হয়। সৌভাগ্যবান হয়।তিনি ডাকেন-কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছ কি? আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি ক্ষমা করে দেব। কারও রিজিকের প্রয়োজন আছে কি? আমার কাছে চাও, আমি রিজিক দেব। কোনো বিপদগ্রস্ত আছ কি? আমার কাছে মুক্তি চাও, আমি বিপদমুক্ত করে দেব! নবিজি (সা.) মুসলিম উম্মাহকে এ রাতে অধিক পরিমাণে নফল ইবাদত এবং পরের দিন রোজা রাখার উপদেশ দিয়েছেন (ইবনে মাজাহ)।

শব অর্থ রাত, বরাত অর্থ মুক্তি; শবেবরাত মানে মুক্তির রাত। কিছু অভিশপ্ত লোক ছাড়া আল্লাহতায়ালা এ রাতে সবাইকে ক্ষমার সুযোগ করে দেন। মহান আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমার সুযোগ পেতে হলে এ রাত ইবাদত ও বিনয়ের সঙ্গে কাটাতে হবে।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কুরআন অবতীর্ণ করেছি ‘বরকতময় রাতে’। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত করা হয়।’ (সূরা দুখান : ২-৩)

বিখ্যাত তাফসিরবিদদের মতে ‘বরকতময় রাত’ মানে শবেবরাত। মহান আল্লাহ শবেবরাতে সবকিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। শবেকদরে নির্দিষ্ট কিছু লোককে সেসব বিষয়ে দায়িত্ব অর্পণ করেন। (তাফসিরে কুরতুবি।)

শবেবরাতের আমল ও করণীয় শাবান মাস হলো নবিজির প্রতি অগাধ ভক্তি, শ্রদ্ধা ও প্রেম-ভালোবাসা প্রদর্শনের মাস। তা হতে হবে সুন্নত অনুশীলনের মাধ্যমে। তাছাড়া নবিজি (সা.) শাবান মাসে সবচেয়ে বেশি নফল ইবাদত করতেন। নফল রোজা পালন করতেন। নফল নামাজ আদায় করতেন।

বলা হয়-রজব মহান আল্লাহর মাস, শাবান নবিজির মাস। আর রমজান হলো উম্মতের মাস। নবিজি (সা.) রজব ও শাবান মাসে এ দোয়া বেশি বেশি পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রমাদান’। ‘হে আল্লাহ! রজব মাস এবং শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন; রমজান পর্যন্ত আমাদের জীবনদান করুন।’ (মুসনাদে আহমাদ)। শবেবরাতে আমরা এ দোয়াটি অধিক পরিমাণে পড়ব।

শবেবরাতে ইবাদত-বন্দেগিতে মনোযোগী হওয়া, বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া, ইস্তিগফার, নফল নামাজ আদায় করা উচিত। দরিদ্রদের সাহায্য করা, জাকাত ও দান-সদকা দিয়ে গরিব-অসহায়দের সাহায্য করা উচিত।

১৪ শাবানের দিবাগত রাতে রাত জাগরণ, দোয়া, ইবাদত ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা সুন্নত আমল।

এ রাতে আমাদের উচিত অপ্রয়োজনে সময় ব্যয় না করে এ পবিত্র রজনিতে আল্লাহর ইবাদত বন্দিগিতে আত্মনিয়োগ করা। তাহিয়্যাতুল অজু, দুখুলিল মাসজিদ, আউওয়াবিন, তাহাজ্জুদ, সালাতুত তাসবিহ, সালাতুল হাজাত ও অন্যান্য নফল নামাজ করা।

কারণ নফল ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো-নামাজ। প্রতিটি নফল ইবাদতের জন্য তাজা অজু বা নতুন অজু করা মোস্তাহাব। অত্যধিক নফল নামাজ এ রাতের শোভাবর্ধন করে। আমাদের উচিত নামাজে কিরাত ধীরগতীতে পড়া। রুকু-সেজদা দীর্ঘ করা।

অধিক পরিমাণে কুরআন তেলাওয়াত করা। দরুদ শরিফ পড়া। অধিক পরিমাণে তাওবা-ইস্তিগফার করা। তাসবিহ তাহলিল, জিকির-আজকার ইত্যাদি ইবাদতে মগ্ন থাকা। নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের জন্য, সব মুমিন মুসলমান এবং দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা।

শবেবরাতের আমল ও করণীয় মহান আল্লাহর কাছ থেকে আমাদের পাপ মোচন করানো এবং ভাগ্যোন্নয়নের জন্য প্রার্থনা করার এটাই শ্রেষ্ঠ সুযোগ। শবেবরাত রজনিতে নিজের যাবতীয় গোনাহের জন্য তাওবা করে রাব্বুল আলামিনের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা। নিজের মনের নেক আশা-আকাঙক্ষা পূরণের জন্য ও মৃতদের মাগফিরাতের জন্য বেশি বেশি করে দোয়া করা।

নফল নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, দোয়া-দরুদ, তাওবা-ইসতিগফার, দান-সদকা, উমরি কাজা নামাজ, কবর জিয়ারতসহ ইত্যাদি নফল আমলের মাধ্যমে রাতগুজার করা। তবে মাকবারে তথা কবরে যাওয়া জরুরি নয়। কবর জিয়ারতকে রুসম বা রেওয়াজে পরিণত করা যাবে না।

কারণ রাসূল (সা.) চুপিসারে একাকী জান্নাতুল বাকিতে কবর জিয়ারত করেছেন। আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)-কে নিদ্রা থেকে জাগ্রত করেননি এবং পরেও কবর জিয়ারত করার কথা বলেননি। তবে দলবদ্ধ ছাড়া একাকীভাবে কবর জিয়ারতে কোনো বাধা নেই।

আনুষ্ঠানিকতা ও জামাত ছাড়া একাকীভাবে সামর্থ্যানুযায়ী নফল ইবাদত-বন্দেগি করা। মসজিদে গিয়ে সমবেতভাবে ইবাদতের প্রয়োজন নেই।

শবেবরাতের আলাদা কোনো নামাজ তথা নির্দিষ্ট সূরা দিয়ে নির্দিষ্ট রাকাত পড়ার নিয়ম ইসলামে নেই। শবেবরাতের নামে রাস্তাঘাটে আতশবাজি, ফটকাবাজি, ঘর আলোকসজ্জা, রাতে মসজিদে অতিরিক্ত আলোকসজ্জা করা, মরিচলাইট, তারাবাতি, আগরবাতি, মোমবাতি, গোলাপজল, কবরে পুষ্প অর্পণ, বাসাবাড়িতে খিচুড়ি পাকানো, হালুয়া রুটি, তাবারুক তৈরি ও মিষ্টান্ন বিতরণের ধুমধামে মত্ত থাকা, রাস্তা-হাটবাজারে যুবকদের আড্ডা ইত্যাদি ইসলাম পরিপন্থি কাজগুলো করা যাবে না।

লেখক: আরবি ভাষার শিক্ষিকা ও হিফজ বিভাগীয় প্রধান, ভিশন একাডেমি, উত্তরা, ঢাকা।

Popular

More like this
Related

যশোর চাঁচড়ায় যুবলীগ ক্যাডারের হামলায় বিএনপি’র কর্মী গুরুতর আহত

যশোর চাঁচড়ায় যুবলীগ ক্যাডারের হামলায় বিএনপি'র কর্মী গুরুতর আহত...

যশোরে পানিতে ডুবে দু’শিশুর মৃত্যু

যশোরের অভয়নগরের পানিতে ডুবে দু’শিশুর মৃত্যু হয়েছে।বুধবার উপজেলার পঁচামাগুরা...

যশোর হাসপাতালের ডাক্তারদের কর্ম বিরতি পালন

যশোর হাসপাতালের ডাক্তারদের কর্ম বিরতি পালন যশোর ২৫০শয্যা জেনারেল হাসপাতালের...

হজ পালনের সর্বনিম্ন বয়স ১৫ বছর নির্ধারণ

এ বছরের হজ মৌসুমে পবিত্র হজ পালনে আগ্রহীদের সর্বনিম্ন...