ভিসি নিয়োগকে কেন্দ্র করে আগুন জ্বলছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বাবদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রো-ভিসি নিয়োগকে কেন্দ্র করে আগুন জ্বলছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বাবদ্যালয় ক্যাম্পাসে। অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন ভিসিসহ সকল শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ছাত্র বিক্ষোভে দিনভর উত্তাল ছিলো গোটা ক্যাম্পাস। ক্লাস, পরীক্ষা, টিউটোর, প্রাকটিক্যাল ক্লাস সব কিছু বর্জন করে ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে। ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকসহ বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। তাদের এক কথা, কোন আওয়ামী ফ্যাসিষ্টকে তারা যবিপ্রবি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দিবে না।
প্রয়োজনে গোটা ক্যাম্পাসের সকল ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয় হবে। সরকার যখন দেশব্যাপী ডেভিল হান্ট শুরু করেছে তখন যবিপ্রবি ক্যাম্পাসে ডেভিলদের পূর্ণবাসন করা হবে এটা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। বরং এই ক্যাম্পাসে বিগত পতিত স্বৈরাচারের দোসর যারা এখনো বিভিন্ন পদে বহাল থেকে ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনা ও তার দলকে পূর্ণবাসনের চেষ্টা করছে তাদেরকে হান্ট করে ক্যাম্পাস ছাড়া করা হবে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যশোর প্রেসক্লাবে তাৎক্ষনিক এক সাংবাদিক সম্মেলন করে এসব কথা বলেন যবিপ্রবির বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্র সমাজের প্রতিনিধি মেহেদী হাসান সাব্বির। এসময় সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন ছাত্র প্রতিনিধি আব্দুল খালেক, সুমন আলী, হাবিবুর রহমান ইমরান,হাবিব কানন, ইসমাইল হোসেন ও মাসুদ রানা।
ছাত্ররা পরিস্কার ভাষায় বলেন, প্রাণ থাকতে এই পবিত্র ক্যাম্পাসে নতুন করে কোন আওয়ামী ফ্যাসিষ্টকে প্রবেশ করতে দেব না। আন্দোলন চলছে, আন্দোলন চলবে। প্রয়োজনে সকল শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সাথে নিয়ে গোটা ক্যাম্পাসকে অচল করে দেয়া হবে। ৩৬ জুলাই আন্দোলনে যেমন যবিপ্রবি ক্যাম্পাস থেকে সকল রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তেমনি এবার নতুন এই আন্দোলন সেই যবিপ্রবি থেকেই শুরু হবে। তারা বলেন, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আস্থাভাজন সাবেক সচিব ও পিএসসির সাবেক সদস্য সদ্য চাকুরীচ্যুত নাজমুন্নাহার খানুম এর স্বামী আরেক ফ্যাসিষ্ট এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চরম বিরোধীতাকারী ডঃ সাইফুল ইসলামকে কখনো যবিপ্রবির প্রো-ভিসি হিসেবে ছাত্র ও শিক্ষকরা মেনে নেবেন না। তার অতীত আমরা ভালো ভাবে জানি। তিনি বঙ্গবন্দু শিক্ষক পরিষদের নেতা ছিলেন । ৫ আগষ্টের পর এই ফ্যাসিষ্টকে সিকৃবি থেকে ছাত্ররা বিতারন করেছে। আজ সুযোগ বুঝে সে যবিপ্রবিতে পূর্ণবাসিত হতে চাচ্ছে।্ এটা কখনো হতে পারে না। আমাদের ভাইবোনদের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। এই রক্তের সাথে বেঈমানী করে যারা এই পতিত ফ্যাসিষ্টের দোসরকে যবিপ্রবির মতো একটা পবিত্র ক্যাম্পাসে পূর্ণবহাল করতে চাচ্ছেন তাদেরকে খুজে বের করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, ইতিমধ্যে ডঃ সাইফুলকে তাড়ানোর জন্য গণস্বাক্ষর কর্মসূচী শুরু হয়েছে। প্রথম দিনেই কয়েক হাজার শিক্ষার্থী তাতে স্বাক্ষর করেছে। এই কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে বলে তারা জানান।
ভিসি নিয়োগকে কেন্দ্র করে আগুন জ্বলছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বাবদ্যালয় ক্যাম্পাসে এদিকে প্রো ভিসি নিয়োগের খবরে গত বুধবার সারাদিনও যবিপ্রবি ক্যাম্পাসে আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত ছিলো। রাতে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকসহ বিভিন্ন ভবনের প্রবেশ মুখে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। যা গতকাল দিনভর অব্যাহত ছিলো।
উল্লেখ্য পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসর সদ্য চাকুরীচ্যুত সাবেক সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুমের স্বামী সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর এফ এম সাইফুল ইসলামকে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) প্রো-ভিসি বানানোর চেষ্টা চলছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে। তিনি সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন “ গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদেরচ্ নেতা এবং ক্রপ বোটানি এন্ড টি প্রোডাকশন টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। ৫ আগষ্টের পর ছাত্র বিক্সোভের মুখে তিনি পালিয়ে জীবন রক্ষা করেন।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী শাসন আমলে ২০১২ সালে স্ত্রীর লবিংয়ে শিক্ষক হিসেবে সিকৃবিতে নিয়োগ প্রাপ্ত হন ড. সাইফুল ইসলাম। তিনি সিকৃবিতে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন গনতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের নেতা ছিলেন। আওয়ামী পন্থী শিক্ষকদের প্যানেল থেকে দুই দুইবার সিকৃবির সিন্ডিকেট সদস্য (২০১৪-১৬ ও ২০২২-২৪ সাল) নির্বাচিত হন তিনি। এছাড়াও ২০১৫-২০১৭ সালে কৃষি অনুষদের ডিনের দায়িত্ব পালন করেন ড. সাইফুল।