সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের দাবিসহ মোট সাত দফা দাবি নিয়ে রাজধানীর শ্যামলীতে সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতরা। দাবিগুলো নিয়ে রোববার বিকাল ৪টার মধ্যে কোনো সিদ্ধান্ত না আসলে সচিবালয় ঘেরাওয়ের হুমকি দিয়েছেন তারা।
রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শ্যামলী শিশু মেলাসহ আশপাশের সড়ক বন্ধ করে দেন তারা। এতে করে মিরপুর রোডের উভয় দিকের পাশাপাশি শ্যামলী থেকে আগারগাঁও সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের যাত্রীরা।
এর আগে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা থেকে একই দাবি নিয়ে রাতভর সড়ক অবরোধ করে রেখেছিলেন তারা।
এদিকে, অবরোধে বিপাকে পড়েছেন রাস্তাটি ব্যবহারকারীরা। আশপাশে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা।
পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের অভিযোগ, সঠিক চিকিৎসার অভাবে দিনের পর দিন অবহেলায় পড়ে আছে। অনেক আহত আছে যারা এখনও বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন তুলে চিকিৎসা করছে। অনেকে নিজের বসতবাড়ি বিক্রি করে চিকিৎসা করাচ্ছে। কেউ তাদের খোঁজ নিচ্ছে না। সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত না করা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
আন্দোলনরত মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘দাবি আদায়ে আমাদের রাস্তায় নামতে হচ্ছে। শেখ হাসিনাকে উৎখাত করে কি লাভ হলো। শেখ হাসিনার আমলের মতোই আমরা বৈষম্যের শিকার। আমাদের অধিকার নিয়ে বর্তমান উপদেষ্টারা স্বোচ্চার না। গতকাল থেকে আমরা সড়কে অবস্থান করছি। অথচ এ নিয়ে সরকারের কোনো মাথা ব্যথা নেই। আজ বিকেল ৪টার মধ্যে যদি আমাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না আসে, তাহলে আমরা সচিবালয় ঘেরাও করতে যাব।’
যাত্রাবাড়ী এলাকায় পায়ে গুলি লাগা আহত হাসান বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাদের ফ্রি চিকিৎসা দেওয়ার ঘোষণা দিলেও হাসপাতালে আমাদের চিকিৎসা দিতে অবহেলা করে। চিকিৎসকরা প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটা সময় প্রতিটি ওয়ার্ডে মুখ দেখিয়ে আসে আর যায়। ঠিকমতো তারা কোনো চিকিৎসা দিচ্ছে না। আমাদের অনেকে চিকিৎসকদের অবহেলার কারণে পঙ্গু হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।’
আন্দোলনরত শাহীন বলেন, ‘আমি ঠিকমতো চিকিৎসা পাইনি। ডাক্তাররা ঠিকমতো চিকিৎসা দিলে আমাকে পঙ্গুত্ব বরণ করে নিতে হতো না। আমি পঙ্গু হয়ে সব কিছু হারালাম। অথচ, এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কারও কোনো মাথা ব্যাথা নেই। বিসর্জন দিয়ে আমরা এখন মহাবিপদে।’
এদিকে, বগুড়ার শেরপুর থেকে সকালে গাবতলীতে এসে পৌঁছান ষাটোর্ধ্ব বয়সি গোলাম আজম। তিনি ঢাকা মেডিকেল যাবেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেলে আমার ভাতিজা চিকিৎসাধীন। তাকে দেখতে সকালে ঢাকায় এসেছি। রাস্তায় গাড়ি বন্ধ তাই কল্যাণপুর থেকে পায়ে হেঁটেই রওয়ানা হয়েছি। জানি না কতদূর হেঁটে যেতে হবে।’
একই অবস্থা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্চারাম্পুর থেকে আসা নুর মোহম্মদের। ভাঙা পায়ের চিকিৎসা করাতে রাজধানীতে আসা এ ব্যক্তি বলেন, ‘দুর্ঘটনায় আমার পা ভেঙে যায়। গ্রামের চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় আমার পায়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। আজকে পঙ্গু হাসপাতালে সকাল বেলা ডাক্তার দেখিয়েছি। এখন সাভার যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়িতে উঠেছিলাম। কিন্তু দীর্ঘ সময়ে ধরে গাড়ি থেমে আছে। এজন্য বাধ্য হয়ে কষ্ট করে হেঁটে রওয়ানা দিয়েছি। দেখি কষ্ট করে কতদূর হেঁটে যাওয়া যায়।’