অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রমে নির্বাচনের কমিশনের (ইসি) সাংবিধানিক স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন থাকার গ্যারান্টি চেয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, ইসির স্বাধীনতা খর্ব হোক এটা আমরা চাই না।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারসহ একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন।
সিইসি বলেন, আমাদের যে প্রতিশ্রুতি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এতে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি; এ কথা তাদের বলেছি। তারা খুশি হয়েছেন। আমরা যে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছি এটা তারা উপলব্ধি করতে পেরেছেন। তারা বলছেন, যে সংস্কারের জন্য সময়টা খুব কম হয়ে যাচ্ছে। তারা সংস্কারের ওপর গুরুত্ব বেশি দিচ্ছেন। তবে তারা প্রেশার নয়, সাজেশন দিচ্ছেন।
সংস্কার নিয়ে কী জানিয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমাদের মতামত আমরা দিয়েছি। সংবিধান আমাদের যে স্বাধীনতা দিয়েছে, সেটা যেন গ্যারান্টেড থাকে, সেটা উনাদের জানিয়েছি। ইসির স্বাধীনতা কম্প্রোমাইজ হোক এটা আমরা চাই না। তারা এটা অ্যাপ্রিশিয়েট করেছেন যে ইসি শুড বি ইন্ডিপেন্ডেন্ট। অন্যথায় জাতি যা প্রত্যাশা করে সেটা তারা দিতে পারবে না।
এর আগে গত রোববার (২৬ জানুয়ারি) নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের দেওয়া কয়েকটি সুপারিশ নিয়ে জোর আপত্তি জানিয়েছেন সিইসি। এক্ষেত্রে প্রচলিত আইনের বাইরে ইসিকে কারও কাছে দায়বদ্ধ করার সুপারিশ এবং অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভরশীলতার সুপারিশ ইসির ক্ষমতা ও স্বাধীনতাকে খর্ব করবে বলে মনে তিনি। একই সঙ্গে ওই সুপারিশগুলো গ্রহণযোগ্য নয় বলেও সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন সিইসি।
দুদিন পর এসে বিদেশি কোনো সংস্থার কাছেও বিষয়টি নিয়ে আপত্তির কথা জানালেন সিইসি। সম্প্রতি সংস্কার কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে ৯ পৃষ্ঠার একটি সুপারিশমালা জমা দিয়েছে৷ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এখন আলোচনা করে সংস্কার উদ্যোগ নেবে সরকার।
ইইউ-এর সঙ্গে বৈঠক নিয়ে সিইসি আরও বলেন, উনারা জানতে চেয়েছেন গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য যে নির্বাচন হবে তার জন্য আমরা কতটুকু প্রস্তুত আছি। আমরা কীভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি, ভোটার নিবন্ধন থেকে আরম্ভ করে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যে প্রস্তুতি তার টাইমলাইন কি রকম হবে ইত্যাদি জানতে চেয়েছেন। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রায় উনারা সব ধরণের সহায়তা করতে প্রস্তুত। উনারা চান যে ডেমোক্রেটিক ট্রানজেকশনটা হোক। এই পথে যতটুকু সহায়তা দরকার উনারা সহায়তা করবেন।
তারা কী ধরণের সহায়তা দেবেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, উনারা লোক পাঠাবেন। পর্যালোচনা করে পরে আমাদের জানাবেন। উনাদের মিশন আসবে৷ নির্বাচন হলে তারা চাচ্ছেন পর্যবেক্ষক হিসেবে থাকবে চান। আশ্বস্ত করেছি সুষ্ঠু নির্বাচনের। কেননা, আমরা তো সর্বশক্তি নিয়োগ করেছি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য।
ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেন, সিইসির সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম। আমাদের মধ্যে চমৎকার আলোচনা হয়েছে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন নিয়ে। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়া, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য আমি এখানে সহায়তার বার্তা নিয়ে এসেছি। বাংলাদেশের এই অতি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ইসিকে কী সহায়তা করতে পারে ইইউ, সিইসির কাছে সেটাও জানতে চেয়েছি।