পুলিশ পরিচয় অপরাধ ঘটছে বেশি: যশোরে চারমাসে ১০টি দুর্ধর্ষ ডাকাতি ২০টি দুঃসাহসিক চুরি

Date:

যশোর প্রতিনিধি: যশোরে গত চারমাসে ১০টি দুর্ধর্ষ ডাকাতি অন্তত ২০টি দুঃসাহসিক চুরি ও শহরের বিভিন্ন এলাকায় অপরাধ সংগঠিত হওয়ার ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে যশোরবাসি।এসব ঘটনায় পুলিশ তেমন কোন কূলকিনারা করতে পারছে না। চুরি ডাকাতি এসব ঘটনায় লুট হয়ে যাওয়া ভালো ভালো উদ্ধার উদ্ধার করতে পারছে না। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে ইতিমধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
সর্বশেষ গত ১জানুয়ারি গভীর রাত যশোরে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। একদল ডাকাত যশোরের উপশহর এলাকার গোল্ডেন ইজিবাইক শোরুমের নৈশপ্রহরী আবুল হোসেনকে গামছা দিয়ে বেঁধে ফেলে। পরে তালা কেটে ভেতরে থাকা ইজিবাইকের ২শ টির বেশি ব্যাটারিসহ ২৫লক্ষাধিক টাকার পণ্য লুট করে নিয়ে যায়। যে শোরুমে ডাকাতি হয়েছে,তার কিছু দূরে উপশহর পুলিশ ফাঁড়ি। কিন্তু ডাকাতির ঘটনা পুলিশ কিছুই টের পায়নি। এঘটনায় মামলা হওয়ার দুই দিন পার হলেও কূলকিনারা করতে পারেনি জেলা পুলিশ।
গোল্ডেন বাইক শোরুমের স্বত্বাধিকারী আবুল কাশেম বলেন,রাতে নৈশপ্রহরীর ফোন পেয়ে আমি শোরুমে যাই। গিয়ে দেখি, প্রতিষ্ঠান থেকে ২শ টির বেশি ব্যাটারি,অন্যান্য মালপত্রসহ প্রায় ২৪ লাখ টাকার পণ্য নিয়ে গেছে। থানায় মামলা করেছি,পুলিশ এখনো কাউকে আটক করতে পারেনি। পুলিশ দ্রুত উদ্ধারের আশ্বাস দিয়েছে।
এর আগে ২১ডিসেম্বর গভীর রাতে শহরের শংকরপুর বাস টার্মিনাল এলাকার এস এস মোটরসের সামনে একটি নীল রঙের মিনি পিকআপে ৮/১০ জন এসে দাঁড়ায়। তাদের মধ্যে দুজন কাটার দিয়ে দোকানটির শাটারের তালা কাটে। এরপর দোকানে ট্রাক ভিড়িয়ে প্রায়১৫মিনিটে ১৮লাখ টাকার টায়ার লুট করে পালিয়ে যায় তারা। দুঃসাহসিক এই চুরির দুই মাস পার হলেও পুলিশ এখনো কাউকে আটক কিংবা লুটের মাল উদ্ধার করতে পারেনি।
এসএম মোটরসের ব্যবস্থাপক সাহেব আলী বলেন,আমার দোকান ছাড়াও আশপাশের আরও চারটি দোকানে ও বাসাবাড়িতে চুরি হয়েছে। আমরা অভিযোগ দিয়েছি। পুলিশ আটক কিংবা মালপত্র উদ্ধার করতে পারেনি।’
সাহেব আলী আরও বলেন,ধার-দেনা করে কোম্পানির কাছ থেকে টায়ারগুলো নেওয়া। আবার অনেকের কাছে টায়ার বাবদ অগ্রিম টাকাও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন তাদের টায়ারও দিতে পারছি না। আবার টাকাও ফেরত দিতে পারছি না।’
যশোরে বর্তমানে ডাকাত বা দুঃসাহসিক চুরির আতঙ্ক বিরাজ করছে সর্বত্র। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যমতে, বাসাবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গত চার মাসে যশোরে ১০টি দুর্ধর্ষ ডাকাতি,অন্তত ২০টি দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটেছে।
ডাকাতির ঘটনায় করা মামলার তথ্যমতে, গত ৫জানুয়ারি বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগ্রাম ইউনিয়নের বারভাগ গ্রামের পশুপতি দেবনাথ ও বিশ্বনাথ দেবনাথের বাড়িতে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ডাকাতি করে। ভূক্তভোগী পশুপতি দেবনাথের ছেলে ‘ব্রজেস্বর দেবনাথ জানান,ভোরে ডিবি পুলিশের পরিচয়ে তাঁদের ডাকাডাকি করে। দরজা খুলতে রাজি না হওয়ায় ভেঙে ঢুকবে বলে হুমকি দেয়। এসময় তারা ঘরে ঢুকে বলে,তাদের কাছে তথ্য রয়েছে, চট্টগ্রামের এক আসামি এই বাড়িতে লুকিয়ে রয়েছে। এরপর তারা ওয়াকিটকিতে কথা বলতে থাকে। এ সময় নারীদের ভয় দেখাতে থাকে, আলমারির চাবি না দিলে তাদের মেরে ফেলবে। বাধ্য হয়ে তাদের হাতে চাবি দেওয়া হয়। এরপর তারা পশুপতি দেবনাথের ঘর থেকে এক লাখ টাকা ও কয়েক ভরি স্বর্ণালংকার এবং বিশ্বনাথ দেবনাথের ঘর থেকে পাঁচ হাজার টাকা ও কয়েক ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে নেয়। দুই পরিবার থেকে সাত ভরি স্বর্ণ ও ১লাখ ৫হাজার নিয়ে যায়। ঘটনার এক মাস পার হলেও কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। গত বছরের ২১ নভেম্বর যশোর নড়াইল সড়কের বাঘারপাড়ার ছাতিয়ানতলার দাঁতপুর কেপি ইটভাটার কাছে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে যশোর শহরতলীর ঝুমঝুমপুর বর্ডার গার্ড স্কুল রোডের মইনুদ্দিন নামে এক বিকাশ এজেন্ট ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৩/৪ জন মোটরসাইকেল আরোহী পুলিশ পরিচয় দিয়ে নগদ প্রায় ৩১ হাজার ৮শত টাকা, দুইটি স্মার্টফোন, তিনটি বাটন মোবাইল ফোন একটি মোবাইল ট্যাব ছিনতাই করে নেয়। এ ঘটনায় বাঘারপাড়া থানায় গত ২২ শে নভেম্বর বাঘারপাড়া থানায় অভিযোগ করা হলো আজও পর্যন্ত কোন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। একই বছর২৮ডিসেম্বর বাঘারপাড়া উপজেলার ধুপখালী গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী মোহাম্মদ খোকনের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। একদল ডাকাত কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে পরিবারের লোকজনকে জিম্মি রেখে টাকা ও সোনার অলংকার লুটে নিয়ে যায়।
গত ৯নভেম্বর গভীর রাতে যশোর শহরতলির শেখহাটিতে অবস্থিত এসিআই অ্যাগ্রো লিমিটেডের ডিপোতে দর্ধর্ষ ডাকাতি হয়। মুখে মাস্ক পরা ৮-১০জন ডাকাত মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে দুজন নৈশপ্রহরীকে বেঁধে ২০লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। ওই টাকা ছিল একটি সিন্দুকের মধ্যে। ভাঙতে না পেরে তারা টাকাসহ সিন্দুক নিয়ে যায়।
২৫অক্টোবর ভোরে পাঁচবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদের বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ৭-৮ জনের একদল ডাকাত জানালার গ্রিল ভেঙে ঘরে ঢোকে। পরে তারা অস্ত্রের মুখে আব্দুল ওয়াদুদ এবং তাঁর ছেলের চোখ-হাত বেঁধে টাকা ও সোনার অলংকার লুট করে।
ডাকাতেরা আব্দুল ওয়াদুদের পুত্রবধূর কাছ থেকে চাবি নিয়ে আলমারি খুলে এবং শোকেসের ড্রয়ার ভেঙে প্রায় সাড়ে ৬ভরি সোনার অলংকার, পৌনে ৩লাখ টাকা, সৌদি ১হাজার ২শ রিয়াল, কাপড়চোপড়সহ ১০লক্ষাধিক টাকার মালপত্র লুটে নিয়ে যায়।
গত ২৪অক্টোবর ভোরে যশোর সদর উপজেলার আরবপুর ইউনিয়নের সুজলপুরের বাসিন্দা মোকসেদ আলীর বাড়িতে ডাকাতির চেষ্টা চলে। কিন্তু ওই বাড়িতে সিসি ক্যামেরা থাকায় তাদের ডাকাতির চেষ্টা ব্যর্থ হয়। প্রতিটি ডাকাতির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় আলাদা মামলা হয়েছে। তবে কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন,একের পর এক ব্যবসায়ীদের বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চুরি ও ডাকাতি হচ্ছে। এতে আতঙ্ক বিরাজ করছে ব্যবসায়ী মহলে। ফলে নির্বিঘেœ ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। তিনি আরও বলেন, যশোরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে নাগরিক সমাজ চরম দুর্দশায় পড়বে। দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান মিজানুর রহমান খান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নুর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, দু-একটি ঘটনা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পরিমাপ করা যায় না। যেসব ঘটনা ঘটেছে,সেসব জায়গায় পুলিশ সদস্যদের দায়িত্বে অবহেলা থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থান নেওয়া হবে পাশাপাশি চুরি ডাকাতি ঘটনায় পুলিশ কাজ করছে। পুলিশিং টহল বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বেশি বেশি যৌথ বাহিনীর অভিযান এবং টহল বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে যশোরবাসী।

Popular

More like this
Related

কেশবপুরে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফার মৃত্যু, বিভিন্ন মহলের শোক 

কেশবপুর (যশোর) : যশোরের কেশবপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক...

বেনাপোল স্থল বন্দর এলাকায় আবারও বোমা বিস্ফোরন

বেনাপোল প্রতিনিধি:শান্ত বেনাপোলকে অসান্ত করার জন্য আবারও বেনাপোল স্থল...

পাসপোর্টে থাকছে না পুলিশ ভেরিফিকেশন

পাসপোর্ট ইস্যু ও নবায়নের ক্ষেত্রে এখন থেকে পুলিশ ভেরিফিকেশন...

ঝিকরগাছার শংকরপুরে কৃষি জমির মাটি বাণিজ্যের মহোৎসব

স্টাফ রিপোর্টার: যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চলে কৃষি জমি...