রকমারি সব পদের পিঠের একেকটি হয়ে উঠেছে বাহারি শিল্পকর্ম। কোনো কোনোটি দেখতে অবিকল ফুলের মতো। রূপকথার সেই যাদুকাঠির পরশে গোলাপ ও ডালিয়া ফুল রসে ভরপুর সুমিষ্ট পিঠেয় পরিণত হয়েছে যেন। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও দর্শনার্থীদের কোলাহল। হরেক রকমের শত-সহশ্র পিঠের ঘ্রাণে মুখরিত উৎসব প্রাঙ্গন। এমন দৃশ্য গতকাল শনিবার সাঁঝের বেলার দিকে ঢলে পড়া মাঘের পড়ন্ত বিকেলে যশোর শহরের লালদিঘির পাড়ে ব্রাদার টিটোস হোমের। শিশুদের এই স্কুলটির আঙিনায় এদিন আবহমান গ্রাম-বাঙলার ঐতিহ্যবাহী খাবার পিঠে নিয়ে উৎসবের আয়োজন করা হয়।
স্কুলটির আঙিনা জুড়ে ছিল যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই এমন ভিড়। সারি সারি পেতে রাখা টেবিলগুলো শীতকালীন পিঠেয় ভর্তি। নাম জানা ও অজানা পিঠের খুশবুতে মৌ মৌ করছে উৎসবস্থল। ত্রিশটি স্টলে শতাধিক রকমের পিঠের প্রদর্শনী। ঘুরে ঘুরে পিঠে দেখার পাশাপাশি যে পিঠেটি পছন্দ হচ্ছে; সেগুলোর স্বাদগ্রহণ করে রসনা তৃপ্ত করছেন অনেকে। স্টল থেকে পিঠে কিনে খাওয়ার পাশাপাশি প্যাকেট ভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছেন কেউ কেউ। পিঠে খাওয়ার পাশাপাশি আড্ডা চলে আড্ডা ও খুনসুটি।
পিঠের স্টল ঘুরে দেখা যায়, কতশত রকমের পিঠে তার ইয়ত্তা নেই। শামুকের আকৃতির পিঠের নাম দেওয়া হয়েছে শামুক পিঠা। দাম একেকটি ৫টাকা। নান্দনিক শৈলির সেই পিঠের ভেতরটা নারিকেল ও গুড়ে ঠাসা। গোলপ ফুলের আকৃতির পিঠের নাম গোলাপ পিঠা। হুবুহু ডালিয়া ফুলের আকৃতির তেলে ভাজা গুড়ের পিঠের নাম রাখা হয়েছে ডালিয়া পাকান। গাÑভর্তি নকশায় ভরা নকশি পিঠার দাম ১০ টাকা একেকটির। এ ছাড়াও দুধ পাকান, রসগজা, হৃদয়হরণ, রসগজা, ভাজাপুলি, সেমাই পিঠা, জামাই বরণ, সুন্দরী মাছ পিঠা, চুষি পিঠাসহ বহু পদের পিঠা ছিল স্টলে স্টলে। সুমিষ্ট পাটিসাপটা, পাকান, ভাপা ও কুলি পিঠে ছাড়াও ছিল ঝাল স্বাদের পিঠার সংগ্রহÑ মুরগির মাংসের পুর ভর্তি চিকেন পুলি ও ঝাল-পেঁয়াজসহ রকমারি মশলার পুরে ঠাসা প্যাটিস পিঠা। খেজুরের রসে ভেজানো হরেক পদের পিঠে ছাড়াও ছিল রসের তৈরি পায়েস।
পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি প্রবীণ সাংবাদিক বীরমুক্তিযোদ্ধা রুকুনউদ্দৌলাহ। তিনি বলেন, বাঙলার লোকজ সংস্কৃতির ও গ্রামীণ জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এই পিঠে উৎসব। আবহমান গ্রাম-বাঙলার ঘরে ঘরে একসময় এই উৎসব হতো। হাল আমলে এই উৎসব এখন শহরেও হচ্ছে। প্রত্যেকটি দেশেরই নিজস্ব ধরণের মিষ্টান্ন থাকে। আমাদের গ্রাম-বাঙলার ঘরে তৈরি মিষ্টি জাতীয় খাবারের একটি পিঠা। বাঙালির খাবারের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরার ক্ষেত্রে এই আয়োজন অনেক গুরুত্ব বহন করে।
পিঠা উৎসবের আয়োজক প্রতিষ্ঠান ব্রাদার টিটোস হোমের অধ্যক্ষ আলী আজম টিটো জানান, স্কুলে বছরভর নানা আয়োজনের একটি পিঠা উৎসব। এই উৎসব ঘিরে ব্যাপক উৎসাহ থাকে স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। বাড়িতে মায়েদের সাথে হাতে হাত লাগিয়ে পিঠা বানিয়ে এনে স্টলে বিক্রি করে শিশুরা। একেকটি স্টল তারা ১০ টাকার বিনিময়ে বরাদ্দ নেয়। ৩০টি স্টলে শতাধিক রকমের পিঠা বানিয়ে এনেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। সেগুলোর তারা উৎসবে আসা দর্শনার্র্থীদের কাছে বিক্রি করছে।